মন্তব্যসমূহ

  1. বাংলাসাহিত্যের অন্যতম
    সর্বশ্রেষ্ঠ মৌলিক
    অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস, তাও
    সেই রহস্যময় সুদূর আফ্রিকার
    পটভূমিতে ! অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়
    যেকোন বাঙ্গালীর এই বইটা
    পড়া বাধ্যতামূলক আমার মতে,
    বিদেশী সাহিত্যের পিছনে
    দৌড়ানোর বহু-বহুকাল আগেই যে
    আমাদের বাংলা ভাষাতেও
    একসময়ে কী কালজয়ী অসাধারণ
    রোমহর্ষক মৌলিক
    অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস লেখা
    হয়েছে সেটা যে চাঁদের পাহাড়
    পড়েছে কেবল সেই অনুধাবন
    করতে পারবে । এ উপন্যাসের
    নায়ক তরুণ শঙ্কর এক বাঙালী
    নিম্ন মধ্যবিত্ত যুবক, রক্তে তার
    অ্যাডভেন্ঞ্চারের ডাক, পেটের
    দায়ে চাকরি নিয়ে ঘটনাচক্রে
    মোম্বাসা রেলওয়ের কর্মচারী
    হিসেবে আফ্রিকায় চলে যায় ।
    সেখানে পরিচয় হয় এক ভবঘুরে
    প্রসপেক্টর দিয়েগো
    আলভারেজের সাথে, তার মুখে
    শোনে এক আশ্চর্য হীরার খনি
    আর সেই খনির পাহারাদার এক
    দানবের কথা, এক সাথে দু'জন
    বেরিয়ে পড়ে সেই রহস্যময়
    কিংবদন্তীর খনির খোঁজে । এরপর
    রুদ্ধশ্বাস অভিযান, রোমহর্ষক
    ঘটনাক্রম, কষ্ট, সাহস, বীরত্ব আর
    বন্ধুত্বের অবিস্মরণীয় এক
    কাহিনি ।
    আর সব কিছু বাদ দিলেও চাঁদের
    পাহাড়ের আবেদন বাঙ্গালীদের
    মনে চির অম্লান থাকবে একটা
    কারণেইঃ উঠতি বয়সের যেকোন
    অভিযানপ্রিয় মনের পাঠকই
    শঙ্করের মাঝে নিজেকে খুঁজে
    পাবে, কল্পনা করবে ইস আমিও
    যদি যেতে পারতাম শংকরের মত
    আফ্রিকার সেই রোমাঞ্চকর
    দূর্গম অভিযানে হীরের খনির
    সন্ধানে ! আর বইটার আসল দিক
    কিন্তু এর কাহিনি নয়, এমন
    অ্যাডভেঞ্চারধর্মি কাহিনি
    তো পরবর্তিতেও বেশ কিছু
    লেখা হয়েছে বাংলাসাহিত্যে,
    না, চাঁদের পাহাড় বাংলা
    সাহিত্যের সর্বকালের অতুলনীয়
    এক সম্পদ যে জন্য, সেটা হলো
    বিভূতিভূষণের অসাধারণ জীবন্ত
    বর্ণনা । মনে হবে শঙ্কর বা
    আলভারেজ না, পাঠক নিজেই
    রয়েছে সেই আফ্রিকার গভীরে,
    আফ্রিকা যেন পাঠকের চোখের
    সামনে দেখা যাচ্ছে, সে চলছে
    সাভানা আর নিঝুম অরণ্যের
    গোলকধাঁধার ভেতর দিয়ে । গহীন
    অন্ধকার আফ্রিকার নিখুঁত বর্ণনা
    বাঙ্গালীর সেই চিরন্তন
    অভিযানের তৃষ্ণাকে আরো শত-
    সহস্রগুণ বাড়িয়ে দেয়, আমরা
    যেন নিজেদের সকল ইন্দ্রিয়
    দিয়েই সেসব কিছু অনুভব করতে
    পারি । অথচ অবিশ্বাস্য
    কল্পনাতীত মনে হলেও সত্য,
    লেখক নিজেই নাকি তা
    দেখেননি, স্বশরীরে কখনো
    আফ্রিকা যাননি ! কম্পিউটার-
    ইন্টারনেট-মোবাইলের আধুনিক
    তথ্য প্রযুক্তির বিস্তারের বহু বছর
    আগে তিনি উপন্যাসটি
    লিখেছিলেন কেবলই মাত্র
    এভেইলেবল ম্যাপ আর বইপত্র
    পড়ে, যা পাওয়া সম্ভব হয়েছিল
    হাতের কাছে । কল্পনার চোখ
    দিয়ে তিনি যে আফ্রিকাকে
    দেখেছিলেন, এবং পাঠককে
    দেখিয়েছেন, বোধ করি
    বাস্তবের চোখ দিয়েও
    বেশিরভাগ মানুষের কখনো তা
    দেখা সম্ভব হয় না । এই দিক
    থেকেই চাঁদের পাহাড় অন্য
    যেকোন বাংলা অ্যাডভেঞ্চার/
    কিশোর উপন্যাস থেকে এগিয়ে
    থাকবে চিরকাল, উরাধুরা প্লট
    মাথায় আসলেই সেটা লেখা
    যায়, কিন্তু চাইলেই
    বিভূতিভূষণের মত প্রকৃতির
    বর্ণনা আর গল্পের লেখনি দিয়ে
    পাঠকের সামনে সেটা
    নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়
    না, মনে আজীবনের জন্য দাগ
    কাটা যায় না ।
    কিশোর বয়সে চাঁদের পাহাড়-এর
    স্পর্শে প্রথম যে নিখাঁদ
    রোমাঞ্চ অনুভব করেছিলাম,
    সেটা আমার পাঠকজীবনে আজন্ম
    এক বিশেষ স্থান নিয়ে রেখেছে
    । ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ার সময়
    আবিষ্কার করেছিলাম
    বিভূতিভূষণের অমর সেই চাঁদের
    পাহাড়কে স্কুলের লাইব্রেরির
    তাকের কোণে, আগে থেকে
    কোন কিছু না জেনেই শঙ্কর আর
    আলভারেজের সাথে বেড়িয়ে
    পড়েছিলাম কিংবদন্তীর রহস্যময়
    হীরের খনির খোঁঁজে ।
    পরবর্তিতে অসংখ্য বিদেশি
    সাহিত্য পড়া হয়েছে আফ্রিকার
    পটভূমিতে, বারে বারে
    রোমাঞ্চিত হয়েছি, তুমুল মজা
    পেয়েছি... কিন্তু আজও হেনরি
    রাইডার হ্যাগার্ড বা এডগার
    রাইস বারোজ বা উইলবার স্মিথ,
    আমার কাছে এঁদের যেকোন
    ক্লাসিক আফ্রিকান
    অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাসের চেয়ে
    বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের
    চাঁদের পাহাড়ের অমর এই
    আলেখ্য বহু বহু গুণ বেশি প্রিয় ও
    বেশি এগিয়ে রাখার মতো ।
    সবসময়ই তাই থাকবে ।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন